♦ ব্যবস্থা না নিয়ে দায় মুক্তির সুপারিশ! ♦ আড়ালেই রয়েগেছে দুই জন্মনিবন্ধন সৃষ্টির রহস্য। ♦ বক্তব্য নেয়া হয়নি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের। ♦ বরখাস্তবস্থায় তিন বিভাগীয় পদোন্নতি। ♦ নোটারিতে ঠিকানা পাল্টে হন পাহাড়ের বাসিন্দা।
জালজালিয়াতি ও তথ্যগোপন করে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে একই সঙ্গে দুই চাকরি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাত করছেন চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। চাকরিরত অবস্থাতেই ননজুডিসিয়াল স্টাম্পে ‘নোটারির’ মাধ্যমে করেছেন ঠিকানা পরিবর্তন। নারী কেলেংকারিতে বরখাস্ত থাকাবস্থায় নিয়েছেন তিন বিভাগীয় পদোন্নতি। সুজন বড়ুয়ার এমনসব অভিযোগ ও জালজালিয়াতির ঘটনা তদন্তে উঠে আসার পরও অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেয়ার সুপারিশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২, চট্টগ্রামের উপরিচালক মো. আতিকুল আলম। ২০২২ সালের ৩১ মে সংস্থাটির বিভাগীয় পরিচালক বরাবরে পাঠানো পুন:অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করেন তিনি।
তবে আতিকুল আলমের পাঠানো এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদৌ তাকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে কি-না সংস্থাটির দায়িত্বশীল কারো সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য মিলেনি। এ বিষয়ে মুখখুলতে রাজি হননি জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তা।
তবে দুদকের এ ‘পুন:অনুসন্ধান প্রতিবেদন’ ময়নাতদন্তে দেখা যায়, ননজুডিসিয়াল একশ টাকার তিনটি স্টাম্পের মাধ্যমে ঠিকানা পরিবর্তন করেন সুজন। আর এ ঠিকানা পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি নিজেকে দাবী করছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম বড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা। পৃথক জেলায় নেয়া দুই চাকরিতেই বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে জেলার সিভিল সার্জন কার্য়ালয়ে নিয়মিত অফিস করছেন। অনুপস্থিত থেকেও সার্ভিস বুক ব্যবহারসহ সুযোগসুবিধা ভোগ করছেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী পদে নেয়া প্রথম চাকরির। বিভিন্ন সময় নারী কেলেংকারিসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে হয়েছেন বরখাস্ত। এরমধ্যে নিয়েছেন তিনটি বিভাগীয় পদোন্নতি।
এবার ‘চট্টগ্রাম স্বাস্থ্যে সুজনের ত্রাসের রাজত্ব, সংযুক্তি বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে’ তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন চট্টগ্রামের সির্ভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীন আলম। গত ২৪ সেপ্টেম্বর জেলার পটিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমা আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য দুইজন হলেন ডা. মো. নুরুল হায়দার সদস্য ও ডা. মো. নওশাদ খান সদস্য সচিব।
দুদকের দায়েরকৃত পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া-ভুয়া নাগরিকত্ব ও আইডি কার্ড তৈরি করে একই সংস্থায় দুইটি চাকরি ও তিনটি পদোন্নতি নেয়ার অভিযোগে ২০১৯ এর ২১ অক্টোবর তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন দুদক চট্টগ্রাম সজেকা-২ এর সাবেক সহকারী উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বদলী হয়ে ঢাকায় চলে যাওয়ার পর এ অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তদন্ত কাজ শেষ করে শরীফ ২০২১ এর ২৮ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যা পরবর্তীতে পুন:অনুসন্ধানে দুদক চট্টগ্রাম সজেকা-২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সর্বশেষ তিনি সুজনকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেয়ার সুপারিশ করে ২০২২ এর ৩১ মে দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বরাবরে পুন অনুসন্ধান দায়ের করেন। দুদকের এ পুন:তদন্ত প্রতিবেদনের দৈনিক খোলা কাগজের হাতে এসে পৌচেছে। যা পাঠকের উদ্যেশ্যে তুলে ধরা হলো-
♦ উখিয়ার জন্মনিবন্ধনে স্বাস্থ্য সহকারী কক্সবাজারে-
২০০৪ সালে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে চাকরি নেন ‘সুজন বড়ুয়া’। সেই সময় তার স্থায়ী ঠিকানা দেখান- কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা পালং গ্রাম। ওই গ্রামের-ই বিমল চন্দ্র বড়ুয়া ও প্রীতি রানী বড়ুয়ার পুত্র তিনি। উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ’র ১৯ নম্বর বইয়ে তার জন্মবৃত্তান্ত লিপিব্ধ করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ১৯৮ ৩২২ ১৯৪ ১৫৫ ০৪ ৬৬৬। জন্ম তারিখ- ২৫ অক্টোবর ১৯৮৩। ২০১০ সালের ১০ জুলাই তার এই জন্মনিবন্ধন লিপিবব্ধ এবং একই তারিখে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে।
এরআগে একই তথ্যের ভিত্তিতে ওই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়েছেন স্থানীয় জাতীয়তা সনদ পত্র (নাগরিকত্ত্ব সনদ)। যার সিরিয়াল নাম্বার ৮৪৮ তাং ১৫ অক্টোবর ২০০৩। এসব সনদ ও তথ্য উপাত্তে ২০০৪ সালের ৭ জুলাই কক্সবাজারের উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে চাকরিতে যোগদেন। তিনি ওইসময় স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে একটি অঙ্গিকারপত্রও জমা দেন। তার এ অঙ্গিকার পত্রেও স্থায়ী ঠিকানায় উল্লেখ করেন, গ্রাম-মরিচ্যা পালং, পোষ্ট অফিস- মরিচ্যা বাজার, ইউনিয়ন- হলদিয়া পালং, উপজেলা- উখিয়া, জেলা- কক্সবাজার।
♦ নাইক্ষ্যংছড়ির জন্মনিবন্ধনে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রাঙামাটিতে-
সুজন বড়ুয়া প্রায় ৮বছর স্বাস্থ্য সহকারী পদে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন। এ চাকরি থাকা অবস্থাতেই ২০১২সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন তিনি। এ চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে যোগদান পর্যন্ত সকল কাগজপত্রে নিজের স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেন “গ্রাম- উত্তর ঘুনধুম বড়ুয়া পাড়া, ওয়ার্ড নং-৫, ৩নং ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ, থানা- নাইক্ষ্যংছড়ি, জেলা- বান্দরবান”। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করেন বান্দরবান জেলার স্থায়ী বাসিন্দা স্বরূপ বোমাং চীফ সার্কেলের সনদ। নতুনভাবে সৃজনকরা হয় জন্ম নিবন্ধন। নিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ত্ব সনদ।
♦ ভুয়া দলিলে বোমাং চীফ সার্কেল ও নাগরিকত্ব সনদ নেন ২০১২ সালে-
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের নিয়োগ আবেদনের সংযুক্তিতে জমাদেয়া সুজন বড়ুয়ার জন্ম বিন্ধন সনদ যাচাই করে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি ৩নং ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ’র ৭নম্বর বইয়ে তার এই জন্মবৃত্তান্ত লিপিবব্ধ করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ১৯৮ ৩০৩ ১৭৩ ৫৭১ ০০ ৯৯৪। পারিবারিক বৃত্তান্তে সুজন বড়ুয়া’র পিতার নাম- বিমল চন্দ্র বড়ুয়া, মাতা- প্রিতি রানী বড়ুয়া। ২৫ অক্টোবর ১৯৮৩ ঘুমধুম বড়ুয়া পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেছেন। ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল তার এই জন্ম নিবন্ধন এবং জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়েছে।
তবে এ ইউনিয়ন পরিষদ’র অনলাইন জন্ম নিবন্ধনে সুজন বড়ুয়ার পিতার নাম- বিমল কান্তি বড়ুয়া, মাতা- প্রীতি রানী বড়ুয়া প্রদর্শিত হচ্ছে। একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়েছেন স্থানীয় নাগরিকত্ব সনদ। যার সিরিয়াল নম্বর ৬৩৫, ১৪ এপ্রিল ২০১২। ভূয়া জমাবন্দি ও কাগজপত্রের মাধ্যমে নেন পার্বত্য এ জেলার স্থায়ী বাসিন্দার প্রমান স্বরূপ বান্দরবান বোমাং চীফ সার্কেলের সনদ। যার সিরিয়াল নম্বর ২৩০০৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১২। বোমাং চীফ সার্কেল থেকে নেয়া স্থায়ী বাসিন্দা সনদ পত্রে উল্লেখ রয়েছে সুজন বড়ুয়া নাইক্ষ্যংছড়ির ২৬৭ নং ঘুমধুম মৌজার উত্তর ঘুমধুম বড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা।
♦ স্থায়ী ঠিকানা পাল্টাতে নাইক্ষ্যছড়িতে জায়গা কিনেন ২০১৪ সালে –
সুজন বড়ুয়া উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত তার রিট পিটিশনে বান্দরবানের নাগরিকত্ব সনদের পক্ষে ২৭০ নং নাইক্ষ্যংছড়ি মৌজার একটি জমাবন্দি সংযুক্ত করেন। এ জমাবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভুবন মোহন বড়ুয়ার ছেলে পল্লব বড়ুয়া কাছ থেকে ৩৭ নং হোল্ডিংয়ের ১০ শত তৃতীয় শ্রেণির জমি ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নাম জারি করে নেন বিমল বড়ুয়ার পত্র সুজন বড়ুয়া। যার দলিল নম্বর- ৫১/২০১৪। অথচ সুজন বড়ুয়া বা তার পিতা- বিমল চন্দ্র বড়ুয়া, বা বিমল কান্তি বড়ুয়া আর মাতা- প্রীতি রাণী বড়ুয়া বা প্রীতি রানী বড়ুয়া কারো নামেই রেকর্ডভুক্ত কোনো জায়গা-জমির তথ্য মিলেনি। তাছাড়া ২০১২ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের নিয়োগ আবেদনের সংযুক্তিতে জমাদেয়া বান্দরবান বোমাং রাজার (বোমাং চীফ সার্কেলের) সনদ সুজন বড়ুয়া কোন জমাবন্দি বা দলিলের অনুকূলে পেয়েছেন তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
♦ নিয়োগে যেসব তথ্যগোপন করে সুজন-
চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাঙামাটি জেলা পরিষদ’র এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ব্যতীত বাহিরের প্রার্থীরা আবেদন করার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ওই “নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’র” ৮নম্বর শর্ত উল্লেখ রয়েছে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চাকরি’র জন্য আবেদন এবং চাকরিতে যোগদানের আগে সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করতে হবে। তবে নিয়োগের এসব শর্ত কোনটিই মানেননি সুজন বড়ুয়া। এখনও ব্যবহার করাছেন প্রথম স্বাস্থ্য সহকারী চাকরির সার্ভিস বুক।
♦ রাঙামাটি সিভিল সার্জনের বক্তব্য-
এ ব্যাপারে রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা খোকন চাকমা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সিভিল সার্জনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে জানান, ২০১২ সালে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে নতুন চাকরি নিয়ে রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদেন সুজন বড়ুয়া। যা সরাসরি নিয়োগ। আর এতে শুধুমাত্র তিন পার্বত্য জেলার যোগ্য প্রার্থীদেরই কেবল বাসিন্দাদেরই আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে। এখানে সমতলের কাউকে পাহাড়ে এনে পদায়ন বা পদোন্নতি দেয়ার কোনো সুযোগ বিধান নেই।
♦ এখতিয়ার বর্হিভুত (১০তম গ্রেডে) পদোন্নতি
২০১৫ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে ১০ম গ্রেডে জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি নেন সুজন বড়ুয়া। যা উচ্চতর গ্রেড অবৈধ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ১০ গ্রেডে কোনো নিয়োগ, পদায়ন-পদোন্নতি দেয়ার এখতিয়ার পার্বত্য জেলা পরিষদ এখতিয়ার নাই। তবে সুজন গোপনে সাজসে পদোন্নতি নিয়ে পাহাড় থেকে সমতলে চলে আসেন। ভোগ করছেন উচ্চতর গ্রেডের সকল সুযোগসুবিধা ও বেতন-ভাতা।
♦ যেসব বিষয় উঠে আসেনি দুদকের এ দুই তদন্তে-
২০১২ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের নিয়োগ আবেদন করেন। এ আবেদনের সংযুক্তিতে জমাদেয়া সুজন বড়ুয়ার নাইক্ষ্যংছড়ির স্থায়ী বাসিন্দা স্বরূপ বান্দরবান বোমাং চীফ সার্কেলের সনদ (যার সিরিয়াল নম্বর ২৩০০৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১২) নিয়েছেন কোন জমাবন্দি মূলে? এ জমির মূল মালিক কে এবং জমির খতিয়ান ও আর হোণ্ডিং নাম্বার কত? এ জমির মূল মালিক ও মালিকের বাবার নাম কি? কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা পালং গ্রামের ঠিকানায় নেয়া স্বাস্থ্য সহকারী পদে প্রথম চাকরিতে ব্যবহৃত জন্মনিবন্ধন সদন (যার নাম্বার ১৯৮ ৩২২ ১৯৪ ১৫৫ ০৪ ৬৬৬, জন্ম তারিখ- ২৫ অক্টোবর ১৯৮৩) থাকতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে দ্বিতীয় জন্মবিন্ধন সনদ (যার নাম্বার ১৯৮ ৩০৩ ১৭৩ ৫৭১ ০০ ৯৯৪, জন্ম তারিখ- ২৫ অক্টোবর ১৯৮৩) নেয়ার কারণ কি?কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাকরিরত অবস্থায় ননজুডিসিয়াল স্টাম্পে (শুধুমাত্র নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে-নোটারি করে) মাধ্যমে ঠিকানা গোপনকরে করে দ্বিতীয় আরেক ঠিকানায় ফের চাকরি নিতে পারেন কি-না বিশেষজ্ঞের (বিজ্ঞ আইনজীবীর) কোনো বক্তব্য নেই। স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নিয়োগকারী স্থানীয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ- দুই কর্তৃপক্ষকে চিঠিদিয়ে সরাসরি বা অফিসিয়াল বক্তব্য নিয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি এ তদন্ত প্রতিবেদনে। ২০১৫ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে ১০ম গ্রেডে জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পদে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি দেয়ার এখতিয়ারের (বৈধতার) বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের লিখিত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যৌন হয়নারি অপরাধে বরখাস্তের বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেয়া হয়নি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও সিভিল সার্জনের।
♦ যেভাবে চাপা পড়ে সুজনের ফৌজদারী অপরাধ-
চাকরিতে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যেই বান্দরবানের বাসিন্দা সেজে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চাকরি নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ওই সময় এই জাল-জালিয়াতির বিষয়টি লিখিতভাবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যানকে জানান স্থানীয়রা। সুজন বড়ুয়া বিপদ আঁচ করতে পেরে মাত্র তিন মাসের মাথায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ নিয়ে চলে যান বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে নিজ বেতনে পদায়ন হন বান্দরবান জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে। এরপরই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি মারমা সম্প্রদায়ের এক নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে ধর্ষণের চেষ্টায় বরখাস্ত হন সুজন বড়ুয়া। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় বিভাগীয় মামলা।
এসবকিছু আড়াল করে ফের স্ট্যান্ড রিলিজে পাড়ি দেন বান্দরবান থেকে ফেনী। এবার জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর’র বেতনে (নিজ-বেতনে) পদায়ন হন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগ ধামাচাপা দিতে তড়িগড়ি স্ট্যান্ড রিলিজ নিয়ে এবার ফেনী থেকে পাড়ি দেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। কয়েকদিন না যেতেই এখানে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়কের বেতন-ভাতায় দখলে নেন ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক’ ও ‘জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর’সহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদ। এরপর ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিলে জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদ থেকে সড়ে যান তিনি।
♦ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশেন, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুর হক চৌধুরী বলেন, সুজন বড়ুয়ার দূর্নীতি, অবৈধভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতির সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করা দরকার। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।