চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেছেন, সর্বক্ষেত্রেই সংস্কারের দরকার আছে। তবে সংস্কারের ক্ষেত্রে শিক্ষাকে এক নম্বরে রাখতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নায়কেরা রাষ্ট্র মেরামতের যে অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে তা যেন হাতছাড়া না হয়। সরকার বা আমাদর পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড। আর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের অবহেলা করে যদি আঙুলের চিকিৎসা আগে শুরু করা হয় তাহলে তার ফল কী হবে তা ভাবা প্রয়োজন। কারণ বিভিন্ন চেয়ারে যাদের নিয়োগ হয়, হচ্ছে, হবে তাদেরকে শিক্ষাঙ্গনের ভেতর দিয়েই যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মিনি ওয়ার্ল্ড। এখানে অনেক কিছু শেখার আছে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় বুঁদ হয়ে থাকলে চলবে না। অন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবে। শনিবার সকালে কুমিরাস্থ স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইআইইউসি‘র আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) আয়োজিত বসন্তকালীন সেমিস্টার-২০২৫-এর অনার্স প্রোগ্রামের নবাগত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, অন্য কোন নেশা নয়, জ্ঞানের নেশা করতে হবে। শিক্ষকতার নিরপেক্ষতার মহান অহংকার যাতে নষ্ট না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের প্রধান পরিচয় হচ্ছে একাডেমিক পরিচয়। রাজনৈতিক পরিচয় নয়। একাডেমিক পরিচয়কে এক নম্বর পরিচয় করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে একাডেমিক শূন্যতা পূরণ করতে হবে। একজন প্রফেসর আবদুল করিম, প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম, ড. ইউনূস আর জন্ম নিচ্ছে না। তাদের মত মেধাবী সৃষ্টি করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
আইআইইউসি‘র ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম। আরও বক্তব্য রাখেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান খান, আইআইইউসি‘র রেজিস্ট্রার কর্নেল মোহাম্মদ কাসেম পিএসসি (অবঃ) এবং স্বাগতঃ বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি‘র ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার ও ওরিয়েন্টেশেন প্রোগ্রাম অর্গনাইজিং কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো একাডেমিক জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ফ্লেভার বেশি থাকতে হবে। বিশ্বের কোন দেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ পড়ে না। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃংখলা নেই। প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, নতুন প্রজন্মকে রাষ্ট্রের হাল ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমের যেন ঘাটতি না হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, মাছ পচে মাথা থেকে, জাতি পচে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা হাজার হাজার শিক্ষিত দুর্নীতিবাজের জন্ম দিয়েছে, আর এই শিক্ষিত দুর্নীতিবাজরাই দেশকে নরকে পরিণত করেছে। এটা সোনার দেশ, এখানে সোনা ফলে। কিন্তু দুর্নীতি আমাদেরকে পিছিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতির জন্য ষোল কোটি মানুষ দায়ী নয়, প্রশাসনের এক শ্রেণী মানুষের সচেতনতার অভাবে দুর্নীতি পুরো দেশকে গ্রাস করছে। সভাপতির বক্তব্যে আইআইইউসি‘র ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই সময়কে কাজে লাগাতে হবে। কিছু অর্জন করতে গেলে কিছু বর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, গন্তব্য মানে যাত্রা নয়। গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। জাগ্রত অবস্থায় স্বপ্ন দেথতে হবে। তিনি বলেন, সময় হচ্ছে বরফের মত। অন্যমনস্ক হলে বরফ গলার মত সময় ফুরিয়ে যাবে।
ওরিয়েন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতার পর বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে আলোকপাত করেন, একাডেমিক এ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সিরাজুল আরেফিন, সেন্টার ফর জেনারেল এডুকেশন এর পরিচালক হামেদ হাসান, আইআইইউসি’র প্রক্টর মোস্তফা মনির চৌধুরী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. গিয়াসউদ্দিন হাফিজ, টিএমডি’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মহিউদ্দীন হোসাইন, লাইব্রেরিয়ান ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।